প্রথমবারেই বিসিএস (BCS) এ সফল হতে কখন থেকে প্রস্তুতি শুরু করা উচিত?
আপনি যদি বাংলাদেশে সরকারি চাকরির স্বপ্ন দেখে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই বিসিএস (BCS) নিয়ে চিন্তা করেছেন। তবে, বিসিএস কি সত্যিই বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা?
বিসিএস কি বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে মজার কিছু দিক আপনার সামনে আসবে। কিন্তু, মজার দিক বাদ দিয়ে বললে, এটি এমন একটি পরীক্ষা যা প্রতিযোগিতা, প্রস্তুতি এবং ধৈর্যের মিলিত ফল।
আর প্রথমবারেই সফল হওয়ার জন্য কোন সময় থেকে প্রস্তুতি নিতে শুরু করবেন সেটা জানাটা বেশ জরুরি।
বিসিএস এর জন্য কখন থেকে প্রস্তুতি শুরু করা উচিত?
প্রথমেই আসুন বিসিএস এর জন্য প্রিপারেশন কখন শুরু করাউচিতএই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করি।
আপনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তি হন, তখন থেকেই আসলে আপনি বিসিএস (BCS) এর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেন।
ভাবছেন, এতো তাড়াতাড়ি? হ্যাঁ, কারণ বিসিএসের প্রস্তুতি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে থাকবেন, আর এতে আপনার প্রস্তুতি আরো দৃঢ় হবে।
তবে আসল প্রস্তুতির ব্যাপারটা শুরু করা উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বছরের দিকে বা পাশ করার পর। কিন্তু আপনি যদি চান শূন্য থেকে বিসিএস প্রস্তুতি নিতে, তবে এটি একটু ধৈর্য্য এবং পরিকল্পনার বিষয়।
শূন্য থেকে বিসিএস প্রস্তুতি কীভাবে নিবেন?
ধরুন, আপনি একদম শূন্য থেকে শুরু করছেন। আপনি এখন পর্যন্ত বিসিএস নিয়ে তেমন কিছু ভাবেননি। এখন আপনি কী করবেন?
একদম সহজভাবে বললে, প্রথমেই জানতে হবে বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা উচিৎ ।
BCS পরীক্ষার ৩টি ধাপ –
প্রিলিমিনারি
লিখিত এবং
ভাইভা
সব ধাপেই আপনাকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। শুরুতেই আপনি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য সিলেবাস সংগ্রহ করুন।
প্রথমেই সিলেবাস বিশ্লেষণ করা জরুরি এরপর ধীরে ধীরে সকল বিসিএসের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
সিলেবাস বিশ্লেষণ করার পর আপনার কোন কোন বিষয়ে দুর্বলতা আছে এবং কোন কোন বিষয় মোটামুটি ভালো বুঝেন সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজাতে হবে।
অবশ্যই মনে রাখতে হবে অধ্যবসায়, নিয়মানুবর্তিতা এবং ধৈর্য্য এগুলো হলো বিসিএসে সফল হওয়ার প্রধান নিয়ামক।
বিসিএস কি বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা?
অনেকেই প্রশ্ন করেন, বিসিএস কি বাংলাদেশের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা?
সত্যি বলতে, এটা পুরোপুরি নির্ভর করে আপনি কীভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আপনি যদি ধৈর্য্য সহকারে পরিকল্পিতভাবে প্রস্তুতি নেন, তবে এটি মোটেও অসম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ, বিসিএস বাংলাদেশের সবথেকে প্রতিযোগিতামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ পরীক্ষা।
ধরুন, আপনি গেম খেলতে ভালোবাসেন। গেমে তো লেভেল ক্রমাগত কঠিন হয়ে যায়, কিন্তু আপনি ধৈর্য্য ধরে খেলেন।
ঠিক তেমনই BCS পরীক্ষাও ধাপে ধাপে আরো প্রতিযোগিতাপূর্ণ হবে কিন্তু যদি আপনি সঠিক পরিকল্পনা করেন এবং প্রতিটি লেভেলে দক্ষ হন তবে এই পরীক্ষাও আপনার জন্য কঠিন হবে না।
কতদিন সময় নিয়ে বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ?
একটা সাধারণ প্রশ্ন হলো, হাতে কত সময় নিয়ে বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়া উচিৎ? প্রশ্নটির উত্তর সরাসরি দেওয়া কঠিন।
কারন,এটা ব্যক্তিভেদে এবং পরিশ্রমের উপর ভিত্তি করে কমবেশি হতে পারে। তবে, পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য এক বছর সময় টার্গেট করে প্রস্তুতি শুরু করা যেতে পারে।
প্রতিদিন ৭/৮ ঘন্টা সময় দিলেও এক বছরে প্রিলি, রিটেন এবং ভাইভা- এই তিনটি ধাপের জন্য মোটামুটি ভালো প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব।
বিসিএস প্রস্তুতির জন্য কেউ কেউ কোচিং এর সাহায্য নেন কেউবা আবার নিজে নিজেই পড়াশোনা করে থাকে।
শূন্য থেকে বিসিএস এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হলে কী কী করতে হবে?
যদি আপনি শূন্য থেকে বিসিএস প্রস্তুতি নিতে চান, তবে আপনাকে সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হবে। সেক্ষত্রে নিম্নোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
১. সিলেবাস সংগ্রহ করুন: BCS এর প্রিলি ও লিখিত সিলেবাস আপনাকে গাইড করবে কীভাবে পরিকল্পনামাফিক প্রস্তুতি নিতে হবে।
২. সিলেবাস বিশ্লেষণ: শুরুতেই সিলেবাস বিশ্লেষণ করতে হবে, এর মাধ্যমে পুরো সিলেবাস সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হবে।
৩.বুকলিস্ট: যারা ইতোপূর্বে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে বা এই সেক্টরে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ নিয়ে প্রিলি ও রিটেনের জন্য বই সংগ্রহ করা উচিৎ।
৪. প্রশ্ন ব্যাংক সমাধান: প্রস্তুতির শুরুতেই পূর্ববর্তী বিসিএসের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে পড়ে প্রশ্নের প্যাটার্ন সম্পর্কে পুর্ণাঙ্গ ধারণা নিতে হবে।
৫. পূর্ণাঙ্গরুটিন: সিলেবাস ও প্রশ্ন বিশ্লেষণ এবং প্রয়োজনীয় বই সংগ্রহের পর দিনের ২৪ ঘন্টাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে বিষয়ভিত্তিক একটি পূর্ণাঙ্গ রুটিন তৈরি করে সেই অনুযায়ী দৈনন্দিন পড়াশোনা শুরু করতে হবে।
৬. কম্বাইন্ড প্রস্তুতি: সিলেবাসের যে টপিকগুলো প্রিলি. ও রিটেনের সাথে ম্যাচ করে সেই বিষয়গুলো সময় নিয়ে ডিটেইলস পড়তে হবে/সমাধান করতে হবে যাতে করে একই সাথে প্রিলি. ও রিটেনের প্রস্তুতি হয়ে যায়।
৭.নোট করে পড়া: নোট করে পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। প্রতি সাবজেক্টের ১টি করে নোট খাতা রাখতে হবে; সেখানে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্ট এবং কঠিন বিষয়গুলো নোট করে রাখতে হবে। অবসর সময় বা সকালে প্রায়ই সেগুলোতে চোখ বুলাতে হবে।
৮. বিনোদন: ভালো প্রস্তুতির জন্য একটানা না পড়ে ১/১.৩০ ঘন্টা পর পর ছোট ছোট বিরতি নিয়ে পড়লে মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব হয়। মাসে ২/১ বার কোথাও ঘুরে আসতে পারেন ২/১ দিনের জন্য, এতে করে মন সতেজ ও প্রফুল্ল থাকবে । ধৈর্য্য ধরে বেশ কিছুদিন পড়ার পর নিজেকে বিনোদিত করতে পারলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় এবং পড়ালেখায় একঘুয়েমী কাটাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
৯. ধারাবাহিকতা ধরে রাখা: বিসিএস প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পড়ালেখার ধারাবাহিকতা ধরে রাখা এবং ধৈর্য্য সহকারে দৈনন্দিন রুটিন সম্পন্ন করা। প্রস্তুতির শুরু থেকে একদম শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিকতা ধরে রেখে পড়ালেখা করতে পারলে খুব সহজেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
১০. শারীরিক সুস্থতা: বিসিএস প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা। সেক্ষেত্রে কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের অভ্যাস থাকলে সেটা খুব কাজে দেয়।
১১. পরীক্ষা: নিজেকে যাচাই করার জন্য বাসায় নিজে নিজে পরীক্ষা দিতে হবে, পরীক্ষার মাধ্যমে দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সেই বিষয়গুলোতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
১২.পত্রিকা পড়া: দৈনন্দিন পত্রিকা পড়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করতে হবে, এতে করে নিজেকে আপডেট রাখা যাবে এবং বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হবে।
বিসিএস প্রস্তুতি কখন থেকে শুরু করা উচিত?
বিসিএস প্রিপারেশন কখন থেকে নেওয়া উচিত এ বিষয়টার ক্ষেত্রে সঠিক সময় নির্ধারণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষ থেকে শুরু করলে সেটা আদর্শ সময়।
কিন্তু শূন্য থেকে শুরু করলে দ্বিতীয়/তৃতীয় বর্ষ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে পারেন, তবেই সেটা দীর্ঘমেয়াদী ও ফলপ্রসূ হবে।
আপনি যদি ধীরে ধীরে এবং ধারাবাহিকভাবে পড়াশোনা করেন তাহলে সময় নিয়ে চিন্তা না করে ফলাফলের দিকে ফোকাস করুন তাহলে অবশ্যই আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে খুব সহজেই পৌঁছাতে পারবেন।
অবশ্যই মনে রাখবেন, বড় কিছু পেতে হলে পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই। সফলতার জন্য কোনো শর্টকাট রাস্তা নেই।
উপসংহার
বিসিএস একটি ধৈর্য্য, মেধা,পরিশ্রম এবং কৌশলের পরীক্ষা। আপনি যদি পরিকল্পিতভাবে প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন, তবে আপনি অবশ্যই সফল হবেন।
আপনি কখন থকে বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করবেন সেটা একান্তই আপনার নিজস্ব ব্যাপার কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলে আপনার জন্য সহজ কাজটিও কঠিন হয়ে যাবে।
একটা বিষয় মনে রাখবেন, সফলতা ও ব্যর্থতা উভয়ই আপনার এবং আপনার পরিশ্রম, অধ্যবসায়, প্যাশন এবং সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।
Leave A Reply
Allready have an account ? Sign in to leave a reply
Comments
Md Sohanur Rahman Sohan
17.12.2024
Thanks Biddabari