ফেসবুক মার্কেটিং (Facebook Marketing) বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা এবং শক্তিশালী একটি ডিজিটাল মার্কেটিং মাধ্যম।
প্রায় ২.৯ বিলিয়নেরও বেশি এক্টিভ ইউজার নিয়ে, ফেসবুক আমাদের একটি বিশাল অডিয়েন্সের কাছে রিচ করার সুযোগ প্রদান করে।
আপনি যদি আপনার ব্যবসা আরও বাড়াতে চান, পণ্য বা সার্ভিসের প্রচার করতে চান, তাহলে বর্তমান সময়ে ফেইসবুক মার্কেটিং হতে পারে আপনার জন্য সবচেয়ে মূল্যবান হাতিয়ার।
এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব ফেসবুক মার্কেটিং কী? কত প্রকার? কীভাবে করব?
ফেসবুক মার্কেটিং -এর A to Z শিখে আপনি কীভাবে আপনার ব্যবসায় সফলতা অর্জন করতে পারেন, তার সম্পূর্ণ গাইডলাইন পাবেন এই আর্টিকেলে ।
ফেসবুক মার্কেটিং কী?
ফেসবুক মার্কেটিং বলতে বোঝায় ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক প্রচারণা এবং বিজ্ঞাপন প্রচার করা। এই প্রমোশন হতে পারে ফ্রি কিংবা পেইড উভয় ধরণের।
আপনি যদি ফেসবুক মার্কেটিং সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে আপনাকে প্রথমে ফেসবুকের কার্যপদ্ধতি এবং এর বিভিন্ন ফিচার সম্পর্কে জানতে হবে।
ফেসবুক মার্কেটিং কীভাবে কাজ করে?
ফেসবুক পেজ: ফেসবুক পেজ সাধারণত ব্যবসা, ব্র্যান্ড, প্রতিষ্ঠান বা পাবলিক ফিগারদের জন্য তৈরি করা হয়।
পেজের মাধ্যমে আপনি আপনার ব্র্যান্ডের সাথে যুক্ত হওয়া অডিয়েন্সের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।
ফেসবুক গ্রুপ: গ্রুপ হলো ফেসবুকের একটি কমিউনিটি ফিচার, যা আপনাকে নির্দিষ্ট অডিয়েন্সের সাথে কানেক্ট হতে সাহায্য করে।
এখানে আপনি গ্রুপ মেম্বারদের সাথে সরাসরি আলোচনা করতে পারবেন এবং তাদের মতামতও নিতে পারেন।
ফেসবুক বিজ্ঞাপন: ফেসবুক বিজ্ঞাপন মূলত ফেসবুকের পেইড মার্কেটিং পদ্ধতি, যা আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রচারের জন্য অত্যন্ত কার্যকর।
আপনি টার্গেট অডিয়েন্সের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করে খুব সহজেই আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের জন্য গ্রাহক বাড়াতে পারেন।
ফেইসবুক মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন লক্ষ্য পূরণ করতে পারেন। যেমন:
- ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার পণ্য বা সার্ভিস সম্পর্কে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবেন।
এটা অনেকটা বড় মেলার মতো, যেখানে আপনি আপনার দোকান সাজিয়ে রেখেছেন আর লোকজন আপনার দোকানে এসে আপনার পণ্য দেখতে পারবে।
- ফেসবুকের পেইড বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে আপনি আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে ঠিক সেই লোকদের কাছে রিচ করতে পারবেন যারা আপনার পণ্য কিনতে আগ্রহী।
সহজ কথায় বলতে গেলে, ফেসবুক মার্কেটিং হল আপনার ব্যবসাকে অনেক বড় একটা মঞ্চে তুলে ধরা। এখানে আপনি আপনার ব্যবসা সম্পর্কে সবাইকে জানাতে পারবেন, নতুন গ্রাহক খুঁজে পাবেন এবং সরাসরি বিক্রয় বাড়াতে পারবেন।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল মার্কেটিং কি? কেন শিখবো? কিভাবে শুরু করব? A to Z জানুন
ফেসবুক মার্কেটিং কত প্রকার?
ফেসবুক মার্কেটিংকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
- ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং
- এবং পেইড ফেসবুক মার্কেটিং।
১. ফ্রি ফেসবুক মার্কের্টিং
ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং হলো এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে আপনি বিনামূল্যে আপনার বিজনেস প্রোমোট করতে পারেন। চলুন দেখি, কীভাবে-
ফেসবুক পেজ: আপনি আপনার ব্যবসার জন্য একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করতে পারেন এবং সেখানে নিয়মিত পোস্ট, ভিডিও, ছবি এবং আপডেট শেয়ার করতে পারেন।
পেজের মাধ্যমে আপনি আপনার অডিয়েন্সের সাথে সরাসরি কানেক্ট হতে পারেন এবং তাদের থেকে কমেন্ট নিতে পারেন।
ফেসবুক গ্রুপ: গ্রুপ তৈরি করে আপনি আপনার নির্দিষ্ট টার্গেট অডিয়েন্সের সাথে রিলেশন তৈরি করতে পারেন।
গ্রুপের মাধ্যমে আপনি মেম্বারদের সাথে আলোচনা করতে পারেন, তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রোভাইড করতে পারেন এবং আপনার পণ্য বা সার্ভিস সম্পর্কে তাদের মতামত জানতে পারেন।
ইভেন্ট: ফেসবুক ইভেন্ট ফিচার ব্যবহার করে আপনি প্রোমোশন, সেল, বা ওয়েবিনারের জন্য ইভেন্ট তৈরি করতে পারেন।
এতে আপনার অডিয়েন্সের অংশগ্রহণ বাড়বে, পাশাপাশি আপনার ব্যবসার পরিচিতিও বাড়বে।
লাইক, শেয়ার, কমেন্ট: আপনি চাইলে আপনার পেজের পোস্টে লাইক, শেয়ার এবং কমেন্টের মাধ্যমে অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট বাড়াতে পারেন।
নিয়মিত কন্টেন্ট শেয়ার করে এবং অডিয়েন্সের সাথে ইন্টারেক্ট করে আপনি আরও বেশি এনগেজমেন্ট পেতে পারেন।
২. পেইড ফেসবুক মার্কেটিং
বিগিনার লেভেলের অনেক লার্নার এখনও জানেন না যে ফেসবুক এর পেইড মার্কেটিং আসলে কি?
ফেসবুক পেইড মার্কেটিং হলো ফেসবুকের পেইড অ্যাডভার্টাইজিং অপশন ব্যবহার করে পণ্য বা সার্ভিস প্রোমোট করা।
এক্ষেত্রে আপনি নির্দিষ্ট অঞ্চল, বয়স, লিঙ্গ, ইন্টারেস্ট, এবং অন্যান্য ডেমোগ্রাফিক ফ্যাক্টর অনুযায়ী অডিয়েন্সকে লক্ষ্য করে স্পনসর্ড পোস্ট, ভিডিও, এবং বিজ্ঞাপন তৈরি করতে পারেন।
ফ্রি এবং পেইড মার্কেটিং: সুবিধা ও অসুবিধা
ফ্রি এবং পেইড মার্কেটিংয়ের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং
- সুবিধা:
- খরচ কম: ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি সম্পূর্ণ ফ্রিতে করা যায়।
- সরাসরি অডিয়েন্সের সাথে যোগাযোগ: আপনি আপনার গ্রাহকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে তাদের রিভিউ এবং রিএকশন নিতে পারেন। এখানে অর্গানিক অডিয়েন্স তৈরি করার সুযোগ থাকে।
- ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থা: নিয়মিত এবং মানসম্পন্ন কন্টেন্ট শেয়ার করে আপনি আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি গ্রাহকের আস্থা বাড়াতে পারেন।
- অসুবিধা:
- ধীর গতি: ফ্রি মার্কেটিং স্লো কাজ করে। ফেসবুকে ফ্রি মার্কেটিং করলে আপনার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে একটু সময় লাগতে পারে।
- প্রতিযোগিতা: এখানে অনেক ব্যবসায়ী বা সার্ভিস প্রোভাইডার ফেসবুকে ফ্রি মার্কেটিং করে থাকেন, তাই এখানে প্রতিযোগিতা অনেক। আপনার এখানে টিকে থাকতে হলে ইউনিক কন্টেন্ট ক্রিয়েট করতে হবে।
- রিচ কম: অডিয়েন্স রিচ কম হতে পারে।
পেইড ফেসবুক মার্কেটিং
- সুবিধা:
- দ্রুত ফলাফল: পেইড বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপনি খুব দ্রুত আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।
- নির্দিষ্ট অডিয়েন্স: আপনি আপনার পণ্য বা সার্ভিস যে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করতে চান, শুধু তাদের কাছেই আপনার বিজ্ঞাপন দেখাতে পারবেন।
অসুবিধা:
-
- খরচ: পেইড বিজ্ঞাপনের জন্য আপনাকে অর্থ ব্যয় করতে হবে।
- জটিলতা: পেইড বিজ্ঞাপন সিস্টেমটি ফ্রি বিজ্ঞাপনের তুলনায় কিছুটা জটিল হতে পারে তবে অসম্ভব কিছু নয়। কিছু দিন প্র্যাকটিস করলেই আপনার আয়ত্বে চলে আসবে।
কোনটি বেছে নেবেন?
ফ্রি এবং পেইড ফেসবুক মার্কেটিং উভয়েরই কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। কোনটি আপনার জন্য পারফেক্ট হবে তা আপনার বিজনেসের আকার, বাজেট এবং লক্ষ্যের উপর নির্ভর করবে।
- যদি আপনার বাজেট কম হয়: প্রথমে ফ্রি ফেসবুক মার্কেটিং শুরু করতে পারেন।
- যদি আপনি দ্রুত ফলাফল চান: পেইড ফেসবুক মার্কেটিং আপনার জন্য উপযুক্ত হবে।
- যদি আপনি নির্দিষ্ট অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে চান: পেইড ফেসবুক মার্কেটিং আপনার জন্য সেরা বিকল্প।
আরও পড়ুন: ইউটিউব মার্কেটিং কি? কেন? কিভাবে শূন্য থেকে শুরু করবেন?
কেন ফেসবুক মার্কেটিং করব?
ফেসবুক মার্কেটিং এর অনেক সুবিধা রয়েছে। আপনি এর মাধ্যমে আপনার গ্রাহক এবং ব্যবসা দুইটার প্রসার ঘটাতে পারবেন। নিচে কয়েকটি প্রধান সুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হলো -
বিশাল অডিয়েন্স রিচ: Statista-এর এক তথ্যমতে, ফেসবুকে বর্তমানে প্রায় ২.৯ বিলিয়নেরও বেশি মাসিক এক্টিভ ইউজার রয়েছে। যেখানে শুধুমাত্র বাংলাদেশেরই সাড়ে ৫ কোটির বেশী এক্টিভ ইউজার রয়েছে।
সুতরাং আপনি বুঝতেই পারছেন, আপনি যদি ফেইসবুকে মার্কেটিং করেন তাহলে আপনি বিশাল সংখ্যক অডিয়েন্সের কাছে রিচ করতে পারবেন।
টার্গেটি অডিয়েন্স: আপনি নির্দিষ্ট অঞ্চল, বয়স, লিঙ্গ, ইন্টারেস্ট, এবং অন্যান্য ডেমোগ্রাফিক ফ্যাক্টর অনুযায়ী আপনার ইচ্ছা মত অডিয়েন্সের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করতে পারবেন যেইটা ব্যবসার ক্ষেত্রে বেশী ফলপ্রসূ হবে।
কম খরচে প্রোমোশন: অন্যান্য প্রোমোশনের তুলনায় ফেসবুক মার্কেটিং অনেক কম খরচে করা যায়। আপনি চাইলে সামান্য বাজেট দিয়েই একটি সাকসেসফুল ক্যাম্পেইন রান করতে পারেন।
অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট: ফেসবুক মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনি আপনার অডিয়েন্সের সাথে সরাসরি ইন্টারেক্ট করতে পারেন এবং তাদের কমেন্ট নিতে পারেন, যা আপনার ব্যবসা বাড়াতে আরও সাহায্য করে।
কীভাবে ফেসবুক মার্কেটিং করব?
ফেসবুক মার্কেটিং শুরু করতে হলে প্রথমে আপনাকে একটি বিজনেস পেজ ক্রিয়েট করতে হবে।
এরপর, আপনার টার্গেট অডিয়েন্স এবং বিজনেস টার্গেট অনুযায়ী কন্টেন্ট ক্রিয়েট করতে হবে। চলুন বিষয়গুলো আরেকটু বিস্তারিতভাবে জানি-
ধাপ ১: ফেসবুক পেজ তৈরি করুন
সর্বপ্রথম আপনার ব্যবসার জন্য একটি প্রফেশনাল ফেসবুক পেজ তৈরি করুন। তারপর ব্র্যান্ডের সাথে মিল রেখে পেজটিতে একটি আকর্ষণীয় প্রোফাইল পিকচার এবং কাভার ফটো সেট করুন।
ধাপ ২: নিয়মিত কন্টেন্ট শেয়ার করুন
আপনার পেজে নিয়মিত পোস্ট, ভিডিও এবং ছবি শেয়ার করুন। অ্যাট্রাক্টিভ এবং তথ্যবহুল কন্টেন্টের মাধ্যমে আপনার পেজের ফলোয়ারদের সাথে ভাল রিলেশন গড়ে তুলতে পারবেন।
ধাপ ৩: ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার ব্যবহার করুন
ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার ব্যবহার করে আপনি নির্দিষ্ট ইউজারদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন তৈরি করতে পারবেন।
ধাপ ৪: ইউজারদের সাথে যোগাযোগ বাড়ান
আপনি কমেন্ট এবং ম্যাসেজের মাধ্যমে গ্রাহক বা ইউজারদের সাথে সরাসরি কন্টাক্ট করুন। তাদের প্রশ্নের উত্তর দিন, তাদের মতামত গুরুত্বের সাথে নিন।
ধাপ ৫: ফেসবুক ইনসাইটস ব্যবহার করুন
ফেসবুক ইনসাইটস ব্যবহার করে আপনার পেজের পারফরম্যান্স মনিটর করুন। তাহলে কোন কন্টেন্ট সবচেয়ে ভালো কাজ করছে তা বুঝে আপনার কন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন করতে পারবেন।
কী কী লাগবে ফেসবুক মার্কেটিং করতে?
ফেসবুক মার্কেটিং করতে হলে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে যেগুলো নিয়ে এই সেকশনে আলোচনা করা হবে।
তবে বেশীভাগ ইউজার মোবাইল ব্যবহারকারী হওয়ায় আমরা দেখবো মোবাইল দিয়ে ফেসবুক মার্কেটিং করতে চাইলে যে বিষয়গুলো অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে -
মোবাইল ডিভাইস: একটি স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট এর সাথে ভাল ইন্টারনেট কানেকশন থাকতে হবে এবং ফেসবুক অ্যাপ ইনস্টল করে নিতে হবে।
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট: আপনার পারসোনাল অ্যাকাউন্ট থেকে একটি বিজনেস পেজ ক্রিয়েট করতে হবে। এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আপনি আপনার পেজ এবং বিজ্ঞাপন ম্যানেজ করবেন।
কন্টেন্ট প্ল্যান: আপনার কন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজি ঠিক করুন। কোন সময় এবং কী ধরনের কন্টেন্ট শেয়ার করবেন তা আগে থেকে প্লান করে নিন।
ক্যাপশন এবং হ্যাশট্যাগ: আপনার পোস্টের জন্য আকর্ষণীয় ক্যাপশন এবং প্রাসঙ্গিক হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করুন। এটি আপনার কন্টেন্ট আরও বেশি অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে হেল্প করবে।
ফেসবুক অ্যাড ম্যানেজার অ্যাপ: মোবাইল দিয়ে Ad. ম্যানেজ করতে চাইলে Facebook Ad. Manager অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনি বিজ্ঞাপন ক্রিয়েট এবং রান করতে পারবেন।
ফেসবুক মার্কেটিং এর বিভিন্ন কৌশল
সাকসেসফুল প্রমোশনের জন্য আপনাকে অবশ্যই ফেসবুক মার্কেটিং এর বিভিন্ন কৌশল ভালভাবে বুঝে নিতে হবে। এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল উল্লেখ করা হলো:
টার্গেটেড কন্টেন্ট তৈরি: আপনার টার্গেট অডিয়েন্সকে লক্ষ্য করে কন্টেন্ট তৈরি করুন। কন্টেন্টে এমন তথ্য দিন যা আপনার অডিয়েন্সের জন্য প্রাসঙ্গিক এবং উপকারী।
রেগুলার পোস্টিং: নিয়মিত এবং ধারাবাহিকভাবে পোস্ট করুন। আপনার পেজ অ্যাক্টিভ থাকলে অডিয়েন্সও এক্টিভ থাকবে, পাশাপাশি নতুন অডিয়েন্স যুক্ত হবে।
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং: ফেসবুকে জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে কোলাবরেট করুন। তাদের মাধ্যমে আপনার পণ্য বা সার্ভিস প্রচার করলে আপনার ব্র্যান্ডের পরিচিতিও বৃদ্ধি পাবে।
ভিডিও কন্টেন্ট ব্যবহার: ভিডিও কন্টেন্টের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে। আপনি ভিডিও কন্টেন্টের মাধ্যমে আপনার পণ্য বা সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেন।
লাইভ ভিডিও: লাইভ ভিডিওর মাধ্যমে আপনি সরাসরি আপনার অডিয়েন্সের সাথে ইন্টারেক্ট করতে পারেন। এজন্য, লাইভ ইভেন্ট, প্রোডাক্ট লঞ্চ বা প্রশ্নোত্তর সেশন আয়োজন করতে পারেন।
কাস্টমার রিভিউ: আপনার পেজে কাস্টমার রিভিউ শেয়ার করুন। এটি নতুন অডিয়েন্সকে আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের উপর সহজে বিশ্বাস আনতে সাহায্যে করবে। এখানে বিশ্বাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অফার এবং ডিসকাউন্ট: বিশেষ অফার এবং ডিসকাউন্টের মাধ্যমে অডিয়েন্সের দৃষ্টি আকর্ষণ করুন। এই ধরনের প্রমোশন আপনার পণ্যের বিক্রি বৃদ্ধি করবে।
নতুনদের জন্য কিছু ফেসবুক মার্কেটিং টিপস
সঠিক লক্ষ্য ঠিক করুন: প্রথমেই আপনার লক্ষ্য স্থির করুন। আপনি কি ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস বাড়াতে চান, লিড জেনারেট করতে চান, নাকি বিক্রি বাড়াতে চান?
আপনি যদি শুরুতে লক্ষ্য নির্ধারণ করেন তাহলে আপনার জন্য কৌশল নির্ধারণ করা সহজ হবে।
ছোট বাজেট দিয়ে শুরু করুন: শুরুতেই পেইড বিজ্ঞাপনে প্রচুর অর্থ খরচ না করে, প্রথমে ছোট বাজেট দিয়ে পরীক্ষা করে দেখুন কোন কৌশল আপনার ব্যবসার জন্য সবচেয়ে কার্যকর বেশী।
ফেসবুক গ্রুপ: আপনার বিজনেস-রিলেটেড গ্রুপে এক্টিভ থাকুন। গ্রুপে পোস্ট/কমেন্টের মাধ্যমে আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস প্রচার করুন।
টেস্টিং এবং অপটিমাইজেশন: বিজ্ঞাপন রান করানোর সময় বিভিন্ন ভেরিয়েন্ট পরীক্ষা করুন এবং পারফরম্যান্স অনুযায়ী অপটিমাইজ করুন।
এনগেজিং কন্টেন্ট তৈরি: এমন কন্টেন্ট তৈরি করুন যা আপনার অডিয়েন্স পছন্দ করে। কুইজ, কনটেস্ট, এবং পোলের মাধ্যমে অডিয়েন্সের সাথে সরাসরি ইন্টারেক্ট করুন।
ফেসবুক মার্কেটিং করে আয় করার উপায়
ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম: আপনি ফেসবুক মার্কেটার হয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে চালে Upwork, Fiverr, Freelancer-এর মতো প্ল্যাটফর্মে ফেসবুক মার্কেটিং সম্পর্কিত কাজ করতে পারেন।
এখানে আপনি ক্লায়েন্টের জন্য ফেসবুক পেজ ম্যানেজমেন্ট, বিজ্ঞাপন সেটআপ, এবং কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের কাজ করতে পারেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং: নিজের পেজ বা গ্রুপ তৈরি করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন। আপনি বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাক্ট বা সার্ভিস প্রমোট করে কমিশন আয় করতে পারেন।
স্পন্সরশিপ: আপনার জনপ্রিয় পেজ বা গ্রুপের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জন্য স্পন্সরশিপ নিতে পারেন।
এক্ষেত্রে, ব্র্যান্ডগুলি আপনার পেজের মাধ্যমে তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস প্রোমোট করার জন্য আপনাকে অর্থ প্রদান করবে।
ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রি: আপনি ফেসবুকের মাধ্যমে ই-বুক, কোর্স বা সফটওয়্যার এর মতো ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারেন। এটিও আপনার জন্য একটি লাভজনক আয়ের উপায় হতে পারে।
ফেসবুক মার্কেটিং কোর্স
আপনি যদি হাতে কলমে ফেসবুক মার্কেটিং শিখতে চান সেক্ষেত্রে আপনি বাংলায় একটি কোর্স করতে পারেন।
এছাড়াও আপনি যদি ইংরেজি ভাল জানেন তাহলে Udemy, Coursera, এবং LinkedIn Learning-এর মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে কোনো একটি কোর্স করতে পারেন।
তবে আপনি ইউটিউবেও অনেক ফ্রি কোর্স পাবেন। এক্ষেত্রে সমস্যা হবে, আপনি বেসিক লেভেল থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন না। তাই শুরুটা একটা পেইড কোর্স দিয়ে করতে পারলে ভাল হয়।
আরও পড়ুন: ইমেইল মার্কেটিং কি? কত প্রকার? কিভাবে করবেন? আদ্যোপান্ত জানুন
উপসংহার
আপনার প্রশ্ন, ফেসবুক মার্কেটিং কী? কত প্রকার? কীভাবে করব? এর উত্তর আশা করি আপনি এই আর্টিকেল পেয়ে গেছেন।
ফেসবুক মার্কেটিং শিখে আপনি নিজের বিজনেস বা প্রফেশনাল লাইফে এগিয়ে যেতে পারেন। বাংলাদেশে বর্তমানে এই পেশার অনেক চাহিদা রয়েছে।
ফেইসবুক মার্কেটিং শুধু প্রমোশন নয়, বরং আপনার ব্র্যান্ডের পরিচিতি, গ্রাহকদের সাথে রিলেশন এবং ব্যবসায়িক লক্ষ্য পূরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
Comments