শূন্য থেকে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি: সফলতার জন্য সঠিক কৌশল
প্রাইমারি শিক্ষক হওয়া শুধু একটি চাকরি পাওয়ার বিষয় নয়; এটি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ার একটি সুযোগ।
প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় সফল হতে গেলে সঠিক গাইডলাইন, পরিকল্পনা, অধ্যবসায় এবং ধৈর্যের প্রয়োজন।
আপনি যদি শূন্য থেকে প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে চান তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই।
আপনি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন প্যাট্যার্ন, সিলেবাস ইত্যাদি যাচাইপূর্বক বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞান ইত্যাদি কোন বিষয়ে কীভাবে প্রস্তুতি নিবেন সে সংক্রান্ত তথ্য এবং এছাড়াও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় গাইডলাইন পাবেন।
প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্যাটার্ন
নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২ টি ধাপে-
লিখিত পরীক্ষা: ৭৫ নম্বরের এমসিকিউ (MCQ) পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়।
মৌখিক পরীক্ষা: ২৫ নম্বরের হয়।
যেখানে লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, এবং সাধারণ জ্ঞান থেকে ২০ + ২০ + ২০ + ১৫ টি করে মোট ৭৫টি প্রশ্ন থাকে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১ এবং ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা হয়।
পরীক্ষায় ভালো করতে হলে উল্লিখিত চারটি বিষয়ের উপর আলাদাভাবে মনোযোগ দিতে হবে। নিচে প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত প্রস্তুতির কৌশল আলোচনা করা হলো।
বাংলা: উপেক্ষা নয়, মনোযোগ দিন
অনেকেই বাংলা সহজ মনে করে অবহেলা করেন, যা স্পষ্টত বড় ভুল। বাংলায় ভালো করার জন্য সাহিত্য এবং ব্যাকরণ উভয় অংশের উপর আমাদের সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
যদিও ব্যাকরণ অংশ থেকেই সাধারণত বেশী প্রশ্ন থাকে। ব্যাকরণ অংশ থেকে প্রায় ১৭-১৯ টা প্রশ্ন থাকে। আর সাহিত্য অংশ থেকে ১-৩ টা প্রশ্ন থাকে।
কী পড়বেন?
ব্যাকরণ: ভাষা, বর্ণ, শব্দ, সন্ধি, সমাস, কারক-বিভক্তি, উপসর্গ, ধাতু, বানান শুদ্ধি, বাগধারা, এক কথায় প্রকাশ, বাক্য পরিবর্তন ইত্যাদি।
সাহিত্য: রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র, জসীমউদ্দীনসহ বিখ্যাত লেখকদের জীবনী ও সাহিত্যকর্ম। কবিদের উপাধি, ছদ্মনাম, এবং সাহিত্য-সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে।
কৌশল:
বাংলা ব্যাকরণ পড়ার সময় বোর্ড বইয়ের বিভিন্ন নিয়ম ও উদাহরণগুলো মনোযোগ দিয়ে অধ্যয়ন করুন। প্রতিটি ব্যাকরণিক নিয়ম বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে বুঝতে চেষ্টা করুন।
বিখ্যাত রচনাগুলোর মূল বিষয়বস্তু এবং লেখকের নাম মনে রাখার জন্য সাহিত্য অংশে মনোযোগ দিন। সাহিত্য অংশে ভালো করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ভালোকরে চোখ বুলিয়ে যান এবং তা বারবার রিভিশন দিন, যাতে সহজে মনে রাখা যায়।
ইংরেজি
বাংলা বিষয়ের মত ইংরেজিতেও গ্রামার অংশ থেকে ১৮-২০ টি প্রশ্ন থাকবে। অন্যদিকে সাহিত্য অংশ থেকে কখনও কখনও ২/১ টি প্রশ্ন থাকতে পারে।
তবে ভালো প্রস্তুতির জন্য আপনার ইংরেজি গ্রামারের পাশাপাশি সাহিত্যেও মোটামুটি দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।
কী পড়বেন?
গ্রামার:
Parts of Speech
Tense
Subject-Verb Agreement
Right form of Verb
Voice and Narration
Synonym-Antonym
Sentence Correction
Preposition
সাহিত্য:
বিখ্যাত সাহিত্যিকদের রচনা এবং জীবনীর উপর ভিত্তি করে ২/১টি প্রশ্ন থাকতে পারে। যেমন Shakespeare, G B Shaw, Milton প্রভৃতি।
কৌশল:
প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে গ্রামারের বিভিন্ন টপিকগুলো প্র্যাকটিস করুন। প্রশ্ন সমাধান করতে গিয়ে আপনি যেসব অংশে দুর্বল অনুভব করবেন, সেগুলো চিহ্নিত করুন এবং সেগুলোর উপর অতিরিক্ত সময় দিন। এছাড়াও ইংরেজি বিষয়ের প্রস্তুতি আরো সহজ করতে নিচের ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন।
গণিত
গণিত এমন একটি বিষয় যেখানে আপনি একটু বেশি মনোযোগ দিলে সহজেই ভালো নম্বর তুলতে পারবেন, সেজন্য প্রয়োজন বারবার প্র্যাকটিস করা। প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গণিতের ২০ নম্বর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সঠিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কী পড়বেন?
গণিতের প্রস্তুতির জন্য যে সকল টপিক নিয়মিত চর্চা করতে হবে:
পাটিগণিত:
লাভ-ক্ষতি
শতকরা
গড়
অনুপাত
সুদ-আসল
বীজগণিত:
মান নির্ণয়
ধারা
জ্যামিতি:
ত্রিভুজ
চতুর্ভুজ
বৃত্ত
কোণ
কৌশল:
১. বিগত বছরের প্রশ্নপত্র চর্চা করুন:
প্রাইমারি, নিবন্ধন এবং বিসিএস পরীক্ষার বিগত বছরের গণিত প্রশ্ন সমাধান করুন। এ ধরনের প্রশ্ন থেকে আপনি পরীক্ষার ধরণ সম্পর্কে আইডিয়া পাবেন। যা আপনাকে প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করবে।
২. শর্টকাট পদ্ধতি আয়ত্ত করুন:
গণিতে সময় বাঁচাতে শর্টকাট টেকনিক জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শতকরা, সুদ-আসল এবং লাভ-ক্ষতির সমস্যাগুলোতে শর্টকাট নিয়ম অ্যাপ্লাই করে দ্রুত উত্তর বের করার চেষ্টা করুন।
৩. নিয়মিত মডেল টেস্ট দিন:
নিজের দক্ষতা যাচাই করার জন্য প্রতি সপ্তাহে মডেল টেস্ট দিন। এতে আপনার দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত হবে।
৪. বইয়ের পাশাপাশি অনুশীলন খাতায় দক্ষতা বৃদ্ধি করুন:
শুধু বই পড়লেই হবে না, অনুশীলন খাতায় নিজে নিজে সমস্যাগুলোর সমাধান করে দেখতে হবে। এতে গণিত নিয়ে আপনার আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হবে এবং প্রাইমারি চাকরির প্রস্তুতি আরো ভালো হবে।
৫. জ্যামিতি ও বীজগণিতে মনোযোগ দিন:
অনেকেই জ্যামিতি ও বীজগণিতকে কঠিন মনে করে এড়িয়ে যান। অথচ এখানে সহজ প্রশ্নগুলো বেশি থাকে। ত্রিভুজ, বৃত্ত, এবং ধারা সংক্রান্ত নিয়মগুলো ভালোভাবে রপ্ত করুন।
৬. গণিতের নিয়মগুলো বোঝার চেষ্টা করুন:
গণিত মুখস্থ করার বিষয় নয়, এটি বোঝার বিষয়। নিয়মগুলো বুঝতে চেষ্টা করুন এবং সেগুলো উদাহরণসহ প্র্যাকটিস করুন।
গণিত বিষয়ের প্রস্তুতির সহায়ক হিসেবে আপনি বিদ্যাবাড়ির এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।
তথ্যপ্রযুক্তি: দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটারের ব্যবহার।
কৌশল:
সাধারণ জ্ঞান অংশে ভালো করার জন্য সঠিক কৌশলে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করুন: প্রাইমারি, নিবন্ধন ও বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো চিহ্নিত করুন।
গুরুত্বপূর্ণ টপিক বারবার পড়ুন: বারবার পড়ার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে।
সংক্ষিপ্ত নোট তৈরি করুন: প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ টপিকের জন্য নিজস্ব নোট তৈরি করুন।
মডেল টেস্ট দিন: সময় নিয়ে নিয়মিত মডেল টেস্ট দিন এবং নিজেকে যাচাই করুন।
সময় বাঁচিয়ে পড়ুন: সাম্প্রতিক বিষয় বা আন্তর্জাতিক অংশ থেকে বেশি প্রশ্ন আসে না। তাই সময় সাশ্রয়ী উপায়ে কেবল প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পড়ুন।
প্রস্তুতির সময় কৌশল কী হবে?
১. বিগত বছরের প্রশ্ন চর্চা করুন:
বিগত বছরের প্রশ্ন থেকে অনেক সময় হুবহু প্রশ্ন আসে। তাই প্রাইমারি জব প্রস্তুতি হিসেবে প্রশ্ন ব্যাংক থেকে পড়া শুরু করা বুদ্ধিমানের কাজ।
২. নিয়মিত মডেল টেস্ট দিন:
পরীক্ষার আগে নিয়মিত মডেল টেস্ট দিয়ে নিজের দুর্বলতা বের করুন। কমপক্ষে ১৫টি মডেল টেস্ট দিন এবং প্রতিবার উত্তর বিশ্লেষণ করে বুঝুন কোথায় আপনাকে আরো ভালো করতে হবে।
৩. গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বারবার পড়ুন:
সবকিছু একবার পড়ে রাখলেই হবে না। বারবার রিভিশন দিন।
৪. সময় বাঁচান:
ডিজিটাল মিডিয়ায় সময় অপচয় না করে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় পড়ার জন্য বরাদ্দ করুন।
৫. সময় ব্যবস্থাপনা:
প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন। প্রতিটি বিষয় চর্চার জন্য সময় নির্ধারণ করুন।
৬. গ্রুপ স্টাডি:
বন্ধু বা সহকর্মীদের সঙ্গে গ্রুপ স্টাডি করলে নতুন টপিক শিখতে সুবিধা হয়।
৭. নোট তৈরি:
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং ফর্মুলা আলাদা নোটে লিখে রাখুন।
৮. রিভিশন:
সব পড়া বারবার রিভিশন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সব পড়া রিভিশনের উপর রাখতে হবে।
পরামর্শ
নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রাখুন।
যেসব টপিক থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে, সেগুলো আগে আয়ত্ত করুন।
নিয়মিত চর্চা এবং সঠিক পরিকল্পনা আপনাকে সফলতা এনে দেবে।
ডিজিটাল মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় নষ্ট করা থেকে বিরত থাকুন।
প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রস্তুতি বই
প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সঠিক বই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে অনেক ধরনের বই পাওয়া যায় যেগুলো প্রাইমারি প্রস্তুতির জন্য সেরা বই বলে বিক্রয় করা হয়। কিন্তু সব বই সমান কার্যকর এবং মানসম্পন্ন নয়।
বিদ্যাবাড়ির প্রাইমারি সুপার সাজেশন (Primary Super Suggestion) বইটি এ ক্ষেত্রে সেরা একটি পছন্দ। কেননা এটি প্রাইমারি নিয়োগ পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত এবং পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো খুবই সহজ ও সরলভাবে উপস্থাপন করে।
বইটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য
সর্বশেষ আপডেট:
বইটিতে সর্বশেষ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ধাঁচ অনুযায়ী বিষয়বস্তু সাজানো হয়েছে। এতে রয়েছে নতুন সিলেবাস ও পরীক্ষার ফরম্যাট অনুযায়ী তথ্য।
বিষয়ভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা:
প্রাইমারি নিয়োগ পরীক্ষার চারটি প্রধান বিষয় (বাংলা ও সাহিত্য, ইংরেজি, গণিত, এবং সাধারণ জ্ঞান) প্রতিটির জন্যই বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও প্রয়োজনীয় প্রশ্ন-উত্তর সংযোজন করা হয়েছে।
কমন পড়ার নিশ্চয়তা:
"সুপার সাজেশন" নামে পরিচিত এই বইটি পরীক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি কমন প্রশ্ন প্রদান করার জন্য পরিচিত। এতে বিগত বছরের প্রশ্ন ও মডেল টেস্টের সমাধানও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সহজ ভাষায় উপস্থাপন:
বইটি এমনভাবে লেখা হয়েছে যাতে যে কেউ সহজে বুঝতে পারে। কঠিন বিষয়গুলোও সরল ব্যাখ্যা এবং উদাহরণের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।
শেষ কথা
শূন্য থেকে শুরু করলেও পরিকল্পিত পড়াশোনা, অধ্যবসায়, এবং নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি সঠিকভাবে নিতে পারলে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন এবং মনোযোগের সঙ্গে প্রস্তুতি নিন। সফলতা আপনার হাতের মুঠোয় আসবেই!
Leave A Reply
Allready have an account ? Sign in to leave a reply
Comments